ই-পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম। ই-পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন – E Passport Apply Online
পাসপোমোবাইল দিয়ে অনলাইনে ই-পাসপোর্ট করার সকল নিয়ম, ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?, কত টাকা খরচ হয় ই-পাসপোর্ট করতে এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন সহ সকল তথ্য আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন।
দালাল ছাড়া, কোন এজেন্সিতে যাওয়া ছাড়া এবং কোন প্রকার হয়রানি ছাড়া কিভাবে দ্রুত পাসপোর্ট হাতে নিতে হয়? এবং ই-পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজ পত্র লাগে? কয় দিনে ই-পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। ই-পাসপোর্ট নিয়ে সকল তথ্য জানতে পারবেন।
কিভাবে ই-পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করবো?
ই-পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করা খুবই সহজ কাজ, কম্পিউটার দিয়ে অনলাইনে ই-পাসপোর্ট এর আবেদন করা একটু সহজ তবে, আপনি চাইলে মেবাইল দিয়ে ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। কিভাবে মেবাইল দিয়ে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হয় এই নিয়ে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল (Tech Smart BD) ভিডিও দেওয়া হয়েছে ভিডিওটি দেখে আবেদন করতে পারবেন।
- ই-পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য প্রথমে epassport.gov.bd এই সাইটে প্রবেশ করবেন।
- এরপর Apply Online for e‑Passport / Re‑Issue এখানে ক্লিক করতে হবে।
- এরপর আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে আবেদন করেন তাহলে Yes দিবেন। এবং আপনার জেলা এবং থানা সিলেক্ট করবেন।
- তারপর আপনার ইমেইল দিয়ে (I am Human) ক্লিক করে Continue করতে হবে।
- এখন আপনার ইমেইলে পাসপোর্ট থেকে একটি ভেরিফিকেশন ইমেইল যাবে। ইমেইল থেকে Confirm করুন।
তাহলে আপনার অ্যাকাউন্ট খোলা সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। এখন আপনার অ্যাকাউন্ট লগইন করার জন্য মানুষের মতো আইকনে ক্লিক করে Sign In করে নিন। এরপর Apply for a new e‑Passport ক্লিক করুন। তারপর Ordinary Passport সিলেক্ট করে Save And Continue ক্লিক করুন। আবেদন করতে আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধন কার্ডে যেভাবে আপনার নাম এবং আপনার বাবা-মায়ের নাম থাকে ঠিক ঐভাবে দিয়ে আবেদন করবেন। এখন আপনার নাম ঠিকানা, আপনি কি করেন এই সকল তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে। ভিডিওটি থেকে সকল তথ্য বুঝে নিন।
ই-পাসপোর্ট বানাতে কি কি কাগজ লাগে?
- অ্যাপলিকেশন সামারি প্রিন্টেড কপি
- এ চালান থেকে পে করে, পে স্লিপ অথবা ই-চালান থেকে পেমেন্ট করলে, পেমেন্ট স্লিপ এর প্রিন্টেড কপি
- জাতীয় পরিচয়পত্রের অথবা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি
- নাগরিক সনদপত্র (চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট)
- যদি আবেদন করার সময় স্টুডেন্ট দেন তাহলে এস এস সি অথবা যে স্কুল বা কলেজ অধ্যায়নরত আছেন তার আইডি কার্ড দিতে হবে।
- চাকুরীজীবী হলে তার প্রমাণ দিতে হবে।[অফিস আইডি কার্ডের ফটোকপি ও অনাপত্তিপত্র (অফিসের প্যাডে)]
- ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি।
- অথবা আপনি যে পেশায় আছেন তার পূর্নাঙ্গ প্রমানপত্র
- বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি
- হোল্ডিং ট্যাক্স বিলের ফটোকপি
- বিবাহিত হলে নিকাহনামা র ফটোকপি
- পুরাতন পাসপোর্ট এর ফটোকপি (যদি থাকে-রি-ইস্যু)
এই সকল কাজ লাগবে, যদি উপরোক্ত সকল তথ্য সঠিক হয়ে থাকে তাহলে আপনার পাসপোর্ট বানাতে কোন সমস্যা হবে না।
ই-পাসপোর্ট করতে কত টাকা খরচ হয়?
- ই-পাসপোর্ট ৪৮ পেজ ৫ বছরের জন্য ৪০২৫ টাকা
- ই-পাসপোর্ট ৪৮ পেজ ১০ বছরের জন্য ৫৭৫০ টাকা
- ই-পাসপোর্ট ৬৪ পেজ ৫ বছরের জন্য ৬৩২৫ টাকা
- ই-পাসপোর্ট ৬৪ পেজ ১০ বছরের জন্য ৮০৫০ টাকা
ই-পাসপোর্ট রেগুলার ডেলিভারির খরছ এটা, আপনাদেরকে আমি সাজেস্ট করবো কেউ Express delivery তে না করার।
ই-পাসপোর্ট আবেদন জমা দেওয়ার নিয়ম
সকল কাগজপত্র সাথে নিয়ে আপনার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে চলে যাবেন। অবশ্যই মনে করে আপনার এবং আপনার বাবা-মায়ের অরজিনাল আইডি কার্ড সাথে নিয়ে যাবেন। (অরজিনাল না থাকলে আইডি কার্ড গুলো লেমিনেটিং করে নিবেন)।
অবশ্যই সকাল সকাল যাবেন, ৬/৭ টা বাজে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে যাবেন, যদি দেরি করেন তাহলে সিরিয়াল অনেক পিছনে পড়ে যাবে। তাই পাসপোর্ট আবদেন জমা এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ছবি তুলতে ভোরে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। ছবি এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিলে আপনাকে একটা ডেলিভারি স্লিপ দিবে ঐ স্লিপ পাসপোর্ট নিতে লাগবে।
ই-পাসপোর্ট তৈরী হতে কয় দিন লাগে?
সাধারণত একটি ই-পাসপোর্ট তৈরী হয়ে হাতে আসতে ২১ দিন লাগে। ই-পাসপোর্ট তৈরী হওয়ার কিছু ধাপ আছে, আপনার পাসপোর্ট কোন পর্যায় আছে আপনি চেক করতে পারবেন। নিচে পাসপোর্টের ধাপ গুলো দেওয়া হলো।
- Submitted: আপনার অ্যাপ্লিকেশনটি সফল ভাবে পাসপোর্ট অফিসের ওয়েব সার্ভারে জমা হয়েছে।
- Appointment Scheduled: সাক্ষাতের সময়সূচি নির্ধারণ সম্পূর্ণ হয়েছে। (কোন কোন পাসপোর্ট অফিসে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লাগেনা)
- Enrolment in Process: আপনার অ্যাপ্লিকেশনটি পাসপোর্ট অফিসে জমা হয়েছে এবং সেটি প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে। এই ধাপ সম্পূর্ণ হতে ১-২ দিন লাগে।
- Pending SB Police Clearance: আপনার অ্যাপ্লিকেশনটি পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং পুলিশ তদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। এই ধাপ সম্পূর্ণ হতে ০-১০ দিন লাগে।
- Pending Final Approval: আপনার পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট সন্তোষজনক এবং সেটি পাসপোর্ট অফিসের এসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর (AD) এর এপ্রুভালের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। এই ধাপ সম্পূর্ণ হতে ১-৪ দিন লাগে। (যদি নেগেটিভ হয় তাহলে কেন নেগেটিভ দেওয়া হয়েছে এবং কি সমস্যা তা জানার জন্য AD স্যার কাছে যেতে হবে।
- Approved: এসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর (AD) পাসপোর্ট প্রিন্টের জন্য এপ্রুভ করেছে। এই ধাপ সম্পূর্ণ হতে ১-৩ দিন লাগে।
- Pending in Print Queue: পাসপোর্টটি প্রোডাকশনে প্রিন্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। এই ধাপ সম্পূর্ণ হতে ৩-১৪ দিন লাগে।
- Passport Shipped: আপনার পাসপোর্ট সফলভাবে প্রিন্ট হয়েছে এবং তা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাঠানো হচ্ছে। এই ধাপ সম্পূর্ণ হতে ১-৩ দিন লাগে।
- Passport Ready for Issuance: আপনার পাসপোর্টটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এসে পৌঁছেছে, পাসপোর্টটি এসে নিয়ে যেতে পারেন।
- Passport issued: আপনার পাসপোর্টটি সফলভাবে বিতরণ করা হয়েছে।
এইভাবে পাসপোর্ট ধাপে ধাপে তার অবস্থান পরিবর্তন হয়। আপনার পাসপোর্ট কি অবস্থানে আছে আপনি তা চেক করতে পারবেন।
পাসপোর্ট এর বর্তমান অবস্থা কি তা কিভাবে চেক করব?
আপনার পাসপোর্ট বার্তমানে কি অবস্থায় আছে, তা জানতে প্রবেশ করুন www.epassport.gov.bd এরপর — ৩ ডট লাইনে ক্লিক করে CHECK STATUS প্রবেশ করুন। এখন আপনার অ্যাপ্লিকেশন আইডি এবং বয়স দিয়ে submit করলে দেখতে পারবেন আপনার পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থান কি।
Pending SB Police Clearance – পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন
পুলিশ ভেরিফিকেশন হতে যদি সময় লাগে তাহলে প্লে স্টোর থেকে Hello SB এই অ্যাপটি ডাউনলোড করে আপনার ঠিকানা দিয়ে একটি কমপ্লেন করে দিন। তাহলে দেখবেন ২৪ ঘন্টার ভিতরে পুলিশ আপনাকে কল দিবে।
HelloSB অ্যাপে কমপ্লেন করার নিয়ম।
HelloSB হলো বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ। এই অ্যাপ দিয়ে আপনি বিভিন্ন পুলিশি সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। এই অ্যাপ দিয়ে পাসপোট ভেরিফিকেশন, ইমিগ্রেশন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স, বিদেশী সেবা এবং অনান্য আরো অনেক সুযোগ সুবিধা সাহায্য নিতে পারবেন।
আপনার পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন যদি ৬-১০ দিনের ভিতরে না হয় তাহলে করণীয় হচ্ছে HelloSB তে একটি রিপোর্ট করা। রিপোর্ট করার জন্য অ্যাপটিতে প্রবেশ করুন।তারপর Passport Verification ক্লিক করুন। এখন সর্বপ্রথম আপনার পাসপোর্ট এর এপ্লিকেশন আইডিটি দিতে হবে। তারপর আপনার পাসপোর্ট অফিস সিলেক্ট করতে হবে, কি ধরনের পাসপোর্ট তা সিলেক্ট করতে হবে তারপর SUBJECT দিবেন। Type Of Issue তে Delay দিবেন।
এরপর Description আপনার সকল তথ্য বুঝিয়ে বলবেন, এখানে লিখবেন যে “আজ থেকে ৬/১০ দিন আগে আমার পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করে দেখলাম আমার পাসপোর্টটি বর্তমানে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য পেন্ডিং রয়েছে। আজকে সহ ৭দিন হলো কিন্তু আমার পুলিশ ভেরিফিকেশন কেন?” এই লেখাটা লিখে তারপর আবার আপনার পাসপোর্ট এর এপ্লিকেশন আইডিটি লিখবেন এবং আপনার বয়স দিবেন। এরপর আপনার সকল তথ্য আপনার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, সকল তথ্য দিয়ে একদম নিচে দেখতে পারবেন ডকুমেন্টস ঐ খানে আপনার ডেলিভারি স্লিপ আপলোড করে সাবমিট করবেন।
এরপর ২৪ ঘন্টার ভিতরে পুলিশ আপনাকে কল দিবে এবং HelloSB My Issue তে দেখতে পারবেন যে আপনার রিপোর্ট তারা রিপ্লাই দিয়েছে। এইভাবে খুব দ্রুত আপনার পুলিশ ভেরিফিকেশন করে নিতে পারবেন।